গোপন জ্ঞান বা ইলম:
সৃষ্টির সবকিছুরই সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ থাকে৷ এমনকি সৃষ্টিকর্তাও আছেন কি নেই তারও অজস্র প্রমাণ মেলে সারা জাহানে৷ ঠিক তেমনি গোপন কোন জ্ঞান বা ইলম থাকলে তারও প্রমাণ বা দলিল থাকে৷ কিছু ব্যক্তির মতানুযায়ী কোরআন শরীফ ৩০ পারা নয়, ৪০ পারা৷ ৩০ পারা প্রকাশ্য এবং বাকি ১০ অপ্রকাশ্য, গোপনীয় ইলম৷ যা নবীকরিম (সা: ) হয়ে, হযরত আলী (রা: ) হতে, হাসান বসরী হয়ে বিভিন্ন ওলী-আল্লাহ ও পীরদের সীনায় সীনায় চলে আসছে (নাউজুবিল্লাহ৷)
"শরা লইয়া হুড়াহুড়ি
টের পাইলেন না আলেমগণে
কিছু পাইলা ফকিরগণে
বাতেনের ভেদত পীরে জানে৷"
প্রথমেই বলব, ইতিহাসে এমন কোন প্রমাণ নাই যে, হযরত আলী রা: এর সাথে হাসান বসরী রহ: এর কখনো সাক্ষাত ঘটেছিল৷ গোপন জ্ঞানের ব্যাপারে কিছু ব্যক্তিদের বক্তব্য যে; হুযুর পাক (সা: ), হযরত আলী রা: কে কিছু গোপন জ্ঞান বা মারেফতের ইলম শিক্ষা দিয়েছিলেন যা অন্য কোন সাহাবীদের দেন নি৷ অন্য তিন প্রখ্যাত সাহাবী এর কোন খবরই জানেন না৷ এ বিষয়ে কোরআনের কিছু আয়াত উল্লেখ করছি,
"কোন কিছু গোপন করা নবীর কাজ নয়৷"
(সূরা আলে ইমরান: আয়াত:১৬১)
"হে রাসূল! তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা অবর্তীণ করা হয়েছে তা সকলের নিকট পৌঁছে দাও৷ আর যদি তা সঠিকভাবে পৌঁছে না দাও তাহলে রিসালাতের দায়িত্বকেই পালন করলে না৷"
(সূরা মায়িদা: আয়াত: ৬৭)
এরপরও কোন সুস্থ্য মস্তিস্কের, ইসলামের প্রতি বিশ্বাসী মানুষের আদৌও উচিত্ হবে এটা ভাবা যে, নবী করিম কোরআনের ১০ পারা ইলম গোপন করেছেন!!!
এই গোপন জ্ঞানের ইতিহাস সংক্ষেপে বলতে গেলে, বাউলদের জনশ্রুতিমতে, চৈতন্যদেবের একটি গুহ্য সাধণপ্রণালী ছিল, যা চৈতন্যদেব স্বয়ং মুসলমান আউলচাঁদরুপে পুনরাবির্ভূত হয়ে সাধারণের মধ্যে প্রচার করেছেন৷ এবং পরে সম্ভবত আউলচাঁদের শিষ্যা মাধববিবি এবং মাধববিবির শিষ্য নিত্যানন্দ-পুত্র বীরভদ্র বা বীরচন্দ্র এই গোপন সাধনতত্ত্ব প্রচার করেন৷ অন্যথায়, অবিভক্ত বাংলায় শ্রীচৈতন্যের লীলাক্ষেত্র বৈষ্ণবদের অনুকরণে একটি দলের আবির্ভাব ঘটে৷ শ্রীচৈতন্য একজন দার্শনিক ছিলেন৷ তাঁর যুক্তিতর্ক ও দর্শনের প্রভাবে দলে দলে মুসলিমরা বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে৷ এমতাবস্থায় তাঁর দর্শনকে খন্ডন করার জন্য নদীয়ার শান্তিপুরের নিকট বুড়ল গ্রামের মুনশী আবদুল্লাহ গেল শ্রীচৈতন্যের সঙ্গে 'বাহাস' করতে৷ সেই বাহাসে পরাজিত হয়ে মুন্সী আবদুল্লাহ বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করে চৈতন্যদেবের শিষ্য হয়ে গেলেন, তার নাম রাখা হলো যবন হরিদাস৷ এই যবন হরিদাসই হলো গোপন দশ পারা এবং ষাট হাজার গোপন কথার আবিস্কারক৷ এইসব গোপন জ্ঞানে এমনসব চর্চা বা কর্মের কথা বলা হয়েছে যা লিখবার মত নয়, তবে একটা কথা এখানে স্পষ্ট হওয়া উচিত্, আল্লাহ যা আমাদের জন্য হারাম করেছেন তা হারামই আর যা হালাল করেছেন তা হালালই৷
কিছু ব্যক্তি কোরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন৷ তন্মধ্যে একটি হচ্ছে, সহীহ বোখারী শরীফের "এলেম বা জ্ঞানের পর্ব" পৃষ্ঠা ৬৩, ১২২ নং হাদীস৷ এখানে আছে-
"হযরত আবু হোরায়রা (রা: ) হতে বর্ণিত, আমি হুযুর (সা: ) থেকে দু'ডোল এলেম হেফজ করেছি৷ তার মধ্য থেকে এক ডোল আমি তোমাদের কাছে সাধারণভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি, কিন্তু যদি আমি দ্বিতীয় ডোল এলেম বর্ণনা করি, তা হলে আমার এ (হলকুম) কন্ঠনালী কেটে দেয়া হবে৷ অথর্াত্ আমাকে হত্যা করা হবে৷"
এ হাদীস হতে গোপন জ্ঞানের একটি আভাস পাওয়া গিয়েছে বলে তাদের মত৷ কিন্তু ১১৯ নং হাদীসটি লক্ষ্য করলেই এর জবাব পাওয়া যায়, যেখানে উল্লেখ্য হযরত আবু হোরায়রা রা: বেশি বেশি হাদীস এই জন্য রেওয়াত করতেন কেননা কোরআনে উল্লেখ্য যে, আল্লাহতালা সুস্পষ্ট যুক্তি ও পর্থনির্দেশ নাযিল করেছেন এবং বিশদ বর্ণনা করার পরও যারা তা গোপন রাখেন এবং অন্যেকে না শেখান তবে তার প্রতি আল্লাহর লানত৷
যাই হোক্, প্রকৃতপক্ষে ১২২নং হাদীসটির ব্যাখ্যা পাওয়া যায় (বোখারী শরীফ; বাংলা তরজমা ও ব্যাখ্যা সহকারে; হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড প্রকাশিত; সংস্করণ ১লা মার্চ ১৯৯৬ইং; পৃষ্ঠা ১১২; ৯৫ নং হাদীসে ) যে,
"দ্বিতীয় থলিয়ায় কি প্রকারের এলম ছিল তাহার জন্য কাহারও মাথা ঘামাইতে হইবে না৷ স্বয়ং সাহাবী আবু হোরায়রার নানা প্রকার ইঙ্গিতেই উহা প্রকাশ পায়৷ রাসুল্লাল্লাহ, সাহাবী, খোলাফা বা শাসনকর্তাদের পর হইতে যে সমস্ত বিপথগামী ও অত্যাচারী শাসকদের আবির্ভাব হইবে, রাসুলপাক সে সকলের নামঠিকানা ও সময়ের ভবিষ্যদ্ববাণী করিয়াছিলেন৷ ঐ সকল নাম-ঠিকানা আবু হোরায়রার কন্ঠস্থ ছিল৷ সাহাবী শাসনকর্তাদের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরে ঐ সমস্ত বিপথগামী শাসকদের সময় নিকটবর্তী হইলে পর আবু হোরায়রার মনে সব কিছু জাগিয়া উঠে৷ কিন্তু ইহা প্রকাশে ফল হইবেনা বরং শান্তিশৃঙ্খলা বিপন্ন হইবে, তাই তিনি ঐ সবের বর্ণনা হইতে বিরত থাকেন৷"
গোপন এলম বিষয়ক আরেকটি হাদীস হচ্ছে - "হযরত আবু হোরায়রা (রা: ) বলেন; হুযুরপাক (সা: ) ইরশাদ করিয়াছেন- যাহার কাছে এলেমের কোন কথা জিজ্ঞেস করা হয় আর সে উহা (জানা সত্ত্বেও) গোপন করে, আল্লাহতালা কেয়ামতের দিন তাহার মুখে আগুনের লাগাম পরাইয়া দেবেন৷"
(আবু দাউদ, সুত্র: মুন্তাখাব হাদীস; এলেম ও যিকির অধ্যায়; ৩৪২ পৃষ্ঠা)
এরপরও যদি বলা হয়, হুযুরপাক কোন গোপন এলম শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন তাঁর মনোনিত ব্যক্তিদের, তবে তাঁর প্রতি পক্ষপাতিত্ত্বের অভিযোগ করা ছাড়া আর কিছুই হবে না৷ কেননা, গোপন এলেম নিঃসন্দেহে অত্যন্ত মূল্যবান ও অর্থবহুল যা থেকে অন্যান্য তিন সাহাবীকে তিনি বঞ্চিত করেছেন৷ (আস্তাগফিরুল্লাহ)
এলেম বা জ্ঞান শিক্ষা আবশ্যক৷ মারেফতের তরজমা না বুঝলে ঈমান পরিপূর্ণ হয়না। আল্লাহপাক এটি সবার জন্য ফরয করেছেন৷ আর এখানে গোপন জ্ঞান বা এলেমকে অস্বীকার করা হচ্ছে না। বরং গোপন জ্ঞানের নামে যে তরিকাগুলোর উদ্ভাবন এবং পালন করতে বলে তথাকথিত কিছু ভন্ড ব্যক্তিরা, যারা ইসলামের পবিত্রতা নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই করে না। পাক কোরআনে মূসা আ: এর সাথে খিযির রা: এর সহিত যে মোলাকাত হয় এবং তার যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা থেকে খুব স্পষ্টতই বোঝা যায়, খিযির রা: ভূত-ভবিষ্যত দিব্যদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন। আর এটাতো এলেমই। এই জ্ঞান কি সবার পক্ষে অনুধাবন এবং ধারন করা সম্ভব!!
আমাদের হুযুরপাক তাগিদ দিয়েছেন আমল শক্ত করবার, এলেম অর্জন ও ধারন করবার জন্য যোগ্য পাত্র হবার। অন্যথায় ভুল পাত্রের এলেম ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই করেনা। বাতেনী বা অপ্রকাশ্য জ্ঞান কিরুপ তা উপোরক্ত উল্লেখ করেছি। আমাদের উচিত্ নিজেদের কালব, যিকিরের দ্বারা পরিস্কার করা এবং যথাসাধ্য চেষ্টা করা এলেম হাসিল করা৷ কেননা কোরআন শরীফে আছে-
"যাঁহারা ঈমান আনিয়াছেন এবং বিশেষত: এলেম হাসিল করিয়াছেন আল্লাহতালা তাঁহাদিগকে অনেক উচ্চাসনের অধিকারী করিবেন"
(পারা ২৮; রূকু ২)
মহান আল্লাহর নৈকট্যের পথ:
প্রায়ই শুনেছি কিছু মানুষ আছেন যারা বলেন, আমরা শরীয়তপন্থি এবং উনারা মারেফতপন্থি৷ ভালো কথা, তাহলে এই বিষয়টি একটু পরিস্কার হওয়া উচিত্ যে শরীয়ত ও মারেফত সমান নয়৷ অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন কোন রাস্তা নয়, যে আমি এই রাস্তা দিয়ে যাবো, আপনি ওই রাস্তা দিয়ে যাবেন৷ কে আগে বা আদৌও পৌঁছাতে পারে কি না, দেখা যাক্!! পাঁচতলা বিশিষ্ট দালানের উপর উঠতে হলে আমাকে ১,২ করে সিড়ি ভাঙতে হবে, ধাপে ধাপে এগুতে হবে৷ ১ম তলা বাদ দিয়েই ৩য় কিংবা ২য় তলাতে উঠা সম্ভব?? এখানেও বিষয়টি কিছুটা তেমনই৷
মারেফত
হকিকত
তরিকত
শরীয়ত
খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে ব্যাপারটি হচ্ছে শরীয়ত আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-নিষেধ, হুকুম আহকাম৷ একজন ব্যক্তি যখন সকল প্রকার হুকুম আহকাম মেনে চলতে থাকবে অর্থাত্ জাহেরী ও বাতেনী এলেম অর্জন করে ফেলেন, তিনি তখন একাকীই তরিকা শিখে যান, অর্থাত্ কি প্রকারে এবং কখন আল্লাহর ইবাদত করাটা মোক্ষম সময়৷ (এখানে ওলী-আল্লাদের জীবনী উজ্জ্বল উদাহরণস্বরুপ) হুযুরপাক আমাদের রাত্রিকালীন ইবাদত করবার প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছেন৷ আর এর জন্যেই হয়তবা বলা হয়ে থাকে যে, আজ পর্যন্ত দুনিয়ার যত সাধক, আওলিয়া আধ্যাত্মিক দৌলত লাভ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই এই রাত্রিকালের সাধনা ও আরাধনার দ্বারাই সব কিছুর সন্ধান পেয়েছেন৷ কোন চাকরির আশায় আমিও আবেদন করব, আপনিও করবেন৷ আপনি যদি এক্ষেত্রে আমার চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন তবে আপনি জানবেন কিভাবে, কোন ভাষায় লিখলে আবেদন বেশি গ্রহণযোগ্য হবে৷ ঠিক তেমনি ইলম চর্চা করতে থাকলে তরিকা আপনাতেই শিখে যাবেন৷
এক্ষেত্রে আবারো একটা কথা উল্লেখ করতে ইচ্ছে করছে, আমার আব্বা বলেন, 'আল্লাহপাক বলেছেন, সেজদায় আমি আমার বান্দার মাঝে কোন পর্দা রাখিনা, অতএব, দোয়া করতে চাইলে মোনাজাতের চেয়ে উত্তম হবে তুমি সেজদায় গিয়ে চাও'৷ এটা কিন্তু একপ্রকার তরিকাই বটে৷
বিভিন্ন মোক্ষম তরিকায় ইবাদত করতে থাকলে একসময় নেক্কার ঈমানদার বান্দা হকিকত জানতে পারে৷ অর্থাত্ আত্মদর্শন ঘটে৷ আয়নার মত নিজের প্রতিচ্ছবি তার কাছে প্রতিফলিত হয়৷ সৃষ্টির গুঢ় রহস্য উন্মোচন হয়৷ যা গোপনীয়৷ কেননা, সৃষ্টির সবকিছু আমাদের জানা নেই, আবিস্কার করছি মাত্র৷ সেই গোপন রহস্য অর্থাত্ সৃষ্টির গোপন রহস্য জানা যায়, হকিকত কি তা বোঝা যায়৷ তারপরেই ঘটে মোক্ষম মুক্তি, মারেফত৷ অতএব, এই মারেফতের রাস্তা এত সহজ নয়৷ ঈর্ষা, হিংসা, মোহহীন কোন কালব তৈরি করা কি এতই সহজ!!!
মারেফতের কিছু কথা আছে যা দৃষ্টত্য শরা-শরীয়তের খেলাফ বলে মনে হবে৷ এক্ষেত্রে আবারো আমার আব্বার কাছ থেকে শেখা, মারিফতি একটি বয়ান উল্লেখ করতে চাই৷
যা হচ্ছে:
"চুরি করুম, হারাম খামু
নাচতে নাচতে বেহেশতে যামু৷"
বলা হচ্ছে, চুরি করে এবং হারাম খেলেই বেহেশত পাওয়া যায়! নাহ্, ব্যাপারটি আসলে তা নয়৷ এর কিন্তু অপব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব৷ প্রকৃতপক্ষে গুঢ় অর্থ হচ্ছে, "চুরি করুম", আপনি সবার সাথে বসে গল্প করছেন, আড্ডা দিলেন৷ রাত গভীর হয়ে যাচ্ছে, সবাই ঘুমাতে চলে গেল, আপনিও গেলেন৷ সবাই ঘুমিয়ে পরল, কিন্তু গভীর রাতে আপনি জায়নামায পেতে বসে গেলেন ইবাদত বন্দেগীতে, যার সম্পর্কে কেউ অবগত নয়৷ সকালে আবার যার যার মত কাজে লেগে গেলেন৷ আপনার গভীর রাতের কর্ম সম্পর্কে কেউ জানতে পারলনা৷ এইভাবে আপনি করলেন চুরি৷ "হারাম খামু", আমরা সবাই জানি 'রাগ'... 'ক্রোধ' হচ্ছে 'হারাম'৷ আপনার অত্যাধিক রাগ উঠেছে, এই ক্রোধকে বের না করে আপনি অবদমিত করলেন অর্থাত্ গিলে ফেলা যাকে বলে৷ তাহলে আপনি কি হারাম খেলেন না!
কাজেই এইভাবে আপনি যদি চুরি করেন এবং হারাম খেতে থাকেন তবে ইনশাল্লাহ মহান রাব্বুলআলামীন বেহেশতের দরজা আপনার জন্য খোলা রাখবেন৷
অবশেষে বলব, এলেম বা জ্ঞান অর্জন করা যায়, হাসিল করা যায়৷ কিন্তু আলেম বা জ্ঞানী হওয়া সবার পক্ষে সম্ভব নয়৷ সবাই হয়ওনা৷ কেননা এলেম জানলেই হয়না, আমলও করতে হয়৷ যেমন আমরা খুব স্পষ্ট করেই জানি ক্রোধ, হিংসা, দ্বেষ, অহং, কাম, লোভ, মায়া এসকল প্রবৃত্তিই সবচাইতে বড় শত্রু, বাঁধা৷ আত্মিক উন্নয়নের পথে চরম অন্তরায়৷ এবং আমরা তা জানার পরও চেষ্টা করিনা এর ভয়াবহ বলয় থেকে নিজেদের মুক্ত করার৷ কাজেই এই প্রবৃত্তিগুলোকে যদি দমন করতে না পারি তবে আমাদের আত্মিক উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়৷ কাজেই দোয়া রইল, আল্লাহ যেন আমাদের এলেমের পথ খুলে দেন, এলেম হাসিল করবার শক্তি দেন এবং আলেম হবার তৌফিক দান করেন৷ আমিন৷
তথ্যসুত্র:
১. বোখারী শরীফ; বাংলা তরজমা ও ব্যাখ্যা সহকারে; হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড প্রকাশিত; সংস্করণ ১লা মার্চ ১৯৯৬ইং;
২. সহীদ বোখারী শরীফ, বাংলা তরজমা, সোলেমানিয়া বুক হাউস হতে প্রকাশিত, সংস্করণ বইমেলা ২০০৬ইং;
৩. মুসলিম শরীফ;
৪. তিরমিযি শরীফ;
৫. দৈনন্দিন ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন;
৬. মুন্তাখাব হাদীস;
৭. পীরবাদের বেড়াজালে ইসলাম- অধ্যাপক এ.এফ.ছাদুল হক ফারুক;
৮. বাউল ও সুফি সাহিত্য- ড. আহমেদ শরীফ
৯. মোকসুদুল মোকমিনিন
সৃষ্টির সবকিছুরই সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ থাকে৷ এমনকি সৃষ্টিকর্তাও আছেন কি নেই তারও অজস্র প্রমাণ মেলে সারা জাহানে৷ ঠিক তেমনি গোপন কোন জ্ঞান বা ইলম থাকলে তারও প্রমাণ বা দলিল থাকে৷ কিছু ব্যক্তির মতানুযায়ী কোরআন শরীফ ৩০ পারা নয়, ৪০ পারা৷ ৩০ পারা প্রকাশ্য এবং বাকি ১০ অপ্রকাশ্য, গোপনীয় ইলম৷ যা নবীকরিম (সা: ) হয়ে, হযরত আলী (রা: ) হতে, হাসান বসরী হয়ে বিভিন্ন ওলী-আল্লাহ ও পীরদের সীনায় সীনায় চলে আসছে (নাউজুবিল্লাহ৷)
"শরা লইয়া হুড়াহুড়ি
টের পাইলেন না আলেমগণে
কিছু পাইলা ফকিরগণে
বাতেনের ভেদত পীরে জানে৷"
প্রথমেই বলব, ইতিহাসে এমন কোন প্রমাণ নাই যে, হযরত আলী রা: এর সাথে হাসান বসরী রহ: এর কখনো সাক্ষাত ঘটেছিল৷ গোপন জ্ঞানের ব্যাপারে কিছু ব্যক্তিদের বক্তব্য যে; হুযুর পাক (সা: ), হযরত আলী রা: কে কিছু গোপন জ্ঞান বা মারেফতের ইলম শিক্ষা দিয়েছিলেন যা অন্য কোন সাহাবীদের দেন নি৷ অন্য তিন প্রখ্যাত সাহাবী এর কোন খবরই জানেন না৷ এ বিষয়ে কোরআনের কিছু আয়াত উল্লেখ করছি,
"কোন কিছু গোপন করা নবীর কাজ নয়৷"
(সূরা আলে ইমরান: আয়াত:১৬১)
"হে রাসূল! তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা অবর্তীণ করা হয়েছে তা সকলের নিকট পৌঁছে দাও৷ আর যদি তা সঠিকভাবে পৌঁছে না দাও তাহলে রিসালাতের দায়িত্বকেই পালন করলে না৷"
(সূরা মায়িদা: আয়াত: ৬৭)
এরপরও কোন সুস্থ্য মস্তিস্কের, ইসলামের প্রতি বিশ্বাসী মানুষের আদৌও উচিত্ হবে এটা ভাবা যে, নবী করিম কোরআনের ১০ পারা ইলম গোপন করেছেন!!!
এই গোপন জ্ঞানের ইতিহাস সংক্ষেপে বলতে গেলে, বাউলদের জনশ্রুতিমতে, চৈতন্যদেবের একটি গুহ্য সাধণপ্রণালী ছিল, যা চৈতন্যদেব স্বয়ং মুসলমান আউলচাঁদরুপে পুনরাবির্ভূত হয়ে সাধারণের মধ্যে প্রচার করেছেন৷ এবং পরে সম্ভবত আউলচাঁদের শিষ্যা মাধববিবি এবং মাধববিবির শিষ্য নিত্যানন্দ-পুত্র বীরভদ্র বা বীরচন্দ্র এই গোপন সাধনতত্ত্ব প্রচার করেন৷ অন্যথায়, অবিভক্ত বাংলায় শ্রীচৈতন্যের লীলাক্ষেত্র বৈষ্ণবদের অনুকরণে একটি দলের আবির্ভাব ঘটে৷ শ্রীচৈতন্য একজন দার্শনিক ছিলেন৷ তাঁর যুক্তিতর্ক ও দর্শনের প্রভাবে দলে দলে মুসলিমরা বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে৷ এমতাবস্থায় তাঁর দর্শনকে খন্ডন করার জন্য নদীয়ার শান্তিপুরের নিকট বুড়ল গ্রামের মুনশী আবদুল্লাহ গেল শ্রীচৈতন্যের সঙ্গে 'বাহাস' করতে৷ সেই বাহাসে পরাজিত হয়ে মুন্সী আবদুল্লাহ বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করে চৈতন্যদেবের শিষ্য হয়ে গেলেন, তার নাম রাখা হলো যবন হরিদাস৷ এই যবন হরিদাসই হলো গোপন দশ পারা এবং ষাট হাজার গোপন কথার আবিস্কারক৷ এইসব গোপন জ্ঞানে এমনসব চর্চা বা কর্মের কথা বলা হয়েছে যা লিখবার মত নয়, তবে একটা কথা এখানে স্পষ্ট হওয়া উচিত্, আল্লাহ যা আমাদের জন্য হারাম করেছেন তা হারামই আর যা হালাল করেছেন তা হালালই৷
কিছু ব্যক্তি কোরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন৷ তন্মধ্যে একটি হচ্ছে, সহীহ বোখারী শরীফের "এলেম বা জ্ঞানের পর্ব" পৃষ্ঠা ৬৩, ১২২ নং হাদীস৷ এখানে আছে-
"হযরত আবু হোরায়রা (রা: ) হতে বর্ণিত, আমি হুযুর (সা: ) থেকে দু'ডোল এলেম হেফজ করেছি৷ তার মধ্য থেকে এক ডোল আমি তোমাদের কাছে সাধারণভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি, কিন্তু যদি আমি দ্বিতীয় ডোল এলেম বর্ণনা করি, তা হলে আমার এ (হলকুম) কন্ঠনালী কেটে দেয়া হবে৷ অথর্াত্ আমাকে হত্যা করা হবে৷"
এ হাদীস হতে গোপন জ্ঞানের একটি আভাস পাওয়া গিয়েছে বলে তাদের মত৷ কিন্তু ১১৯ নং হাদীসটি লক্ষ্য করলেই এর জবাব পাওয়া যায়, যেখানে উল্লেখ্য হযরত আবু হোরায়রা রা: বেশি বেশি হাদীস এই জন্য রেওয়াত করতেন কেননা কোরআনে উল্লেখ্য যে, আল্লাহতালা সুস্পষ্ট যুক্তি ও পর্থনির্দেশ নাযিল করেছেন এবং বিশদ বর্ণনা করার পরও যারা তা গোপন রাখেন এবং অন্যেকে না শেখান তবে তার প্রতি আল্লাহর লানত৷
যাই হোক্, প্রকৃতপক্ষে ১২২নং হাদীসটির ব্যাখ্যা পাওয়া যায় (বোখারী শরীফ; বাংলা তরজমা ও ব্যাখ্যা সহকারে; হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড প্রকাশিত; সংস্করণ ১লা মার্চ ১৯৯৬ইং; পৃষ্ঠা ১১২; ৯৫ নং হাদীসে ) যে,
"দ্বিতীয় থলিয়ায় কি প্রকারের এলম ছিল তাহার জন্য কাহারও মাথা ঘামাইতে হইবে না৷ স্বয়ং সাহাবী আবু হোরায়রার নানা প্রকার ইঙ্গিতেই উহা প্রকাশ পায়৷ রাসুল্লাল্লাহ, সাহাবী, খোলাফা বা শাসনকর্তাদের পর হইতে যে সমস্ত বিপথগামী ও অত্যাচারী শাসকদের আবির্ভাব হইবে, রাসুলপাক সে সকলের নামঠিকানা ও সময়ের ভবিষ্যদ্ববাণী করিয়াছিলেন৷ ঐ সকল নাম-ঠিকানা আবু হোরায়রার কন্ঠস্থ ছিল৷ সাহাবী শাসনকর্তাদের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরে ঐ সমস্ত বিপথগামী শাসকদের সময় নিকটবর্তী হইলে পর আবু হোরায়রার মনে সব কিছু জাগিয়া উঠে৷ কিন্তু ইহা প্রকাশে ফল হইবেনা বরং শান্তিশৃঙ্খলা বিপন্ন হইবে, তাই তিনি ঐ সবের বর্ণনা হইতে বিরত থাকেন৷"
গোপন এলম বিষয়ক আরেকটি হাদীস হচ্ছে - "হযরত আবু হোরায়রা (রা: ) বলেন; হুযুরপাক (সা: ) ইরশাদ করিয়াছেন- যাহার কাছে এলেমের কোন কথা জিজ্ঞেস করা হয় আর সে উহা (জানা সত্ত্বেও) গোপন করে, আল্লাহতালা কেয়ামতের দিন তাহার মুখে আগুনের লাগাম পরাইয়া দেবেন৷"
(আবু দাউদ, সুত্র: মুন্তাখাব হাদীস; এলেম ও যিকির অধ্যায়; ৩৪২ পৃষ্ঠা)
এরপরও যদি বলা হয়, হুযুরপাক কোন গোপন এলম শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন তাঁর মনোনিত ব্যক্তিদের, তবে তাঁর প্রতি পক্ষপাতিত্ত্বের অভিযোগ করা ছাড়া আর কিছুই হবে না৷ কেননা, গোপন এলেম নিঃসন্দেহে অত্যন্ত মূল্যবান ও অর্থবহুল যা থেকে অন্যান্য তিন সাহাবীকে তিনি বঞ্চিত করেছেন৷ (আস্তাগফিরুল্লাহ)
এলেম বা জ্ঞান শিক্ষা আবশ্যক৷ মারেফতের তরজমা না বুঝলে ঈমান পরিপূর্ণ হয়না। আল্লাহপাক এটি সবার জন্য ফরয করেছেন৷ আর এখানে গোপন জ্ঞান বা এলেমকে অস্বীকার করা হচ্ছে না। বরং গোপন জ্ঞানের নামে যে তরিকাগুলোর উদ্ভাবন এবং পালন করতে বলে তথাকথিত কিছু ভন্ড ব্যক্তিরা, যারা ইসলামের পবিত্রতা নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই করে না। পাক কোরআনে মূসা আ: এর সাথে খিযির রা: এর সহিত যে মোলাকাত হয় এবং তার যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা থেকে খুব স্পষ্টতই বোঝা যায়, খিযির রা: ভূত-ভবিষ্যত দিব্যদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন। আর এটাতো এলেমই। এই জ্ঞান কি সবার পক্ষে অনুধাবন এবং ধারন করা সম্ভব!!
আমাদের হুযুরপাক তাগিদ দিয়েছেন আমল শক্ত করবার, এলেম অর্জন ও ধারন করবার জন্য যোগ্য পাত্র হবার। অন্যথায় ভুল পাত্রের এলেম ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই করেনা। বাতেনী বা অপ্রকাশ্য জ্ঞান কিরুপ তা উপোরক্ত উল্লেখ করেছি। আমাদের উচিত্ নিজেদের কালব, যিকিরের দ্বারা পরিস্কার করা এবং যথাসাধ্য চেষ্টা করা এলেম হাসিল করা৷ কেননা কোরআন শরীফে আছে-
"যাঁহারা ঈমান আনিয়াছেন এবং বিশেষত: এলেম হাসিল করিয়াছেন আল্লাহতালা তাঁহাদিগকে অনেক উচ্চাসনের অধিকারী করিবেন"
(পারা ২৮; রূকু ২)
মহান আল্লাহর নৈকট্যের পথ:
প্রায়ই শুনেছি কিছু মানুষ আছেন যারা বলেন, আমরা শরীয়তপন্থি এবং উনারা মারেফতপন্থি৷ ভালো কথা, তাহলে এই বিষয়টি একটু পরিস্কার হওয়া উচিত্ যে শরীয়ত ও মারেফত সমান নয়৷ অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন কোন রাস্তা নয়, যে আমি এই রাস্তা দিয়ে যাবো, আপনি ওই রাস্তা দিয়ে যাবেন৷ কে আগে বা আদৌও পৌঁছাতে পারে কি না, দেখা যাক্!! পাঁচতলা বিশিষ্ট দালানের উপর উঠতে হলে আমাকে ১,২ করে সিড়ি ভাঙতে হবে, ধাপে ধাপে এগুতে হবে৷ ১ম তলা বাদ দিয়েই ৩য় কিংবা ২য় তলাতে উঠা সম্ভব?? এখানেও বিষয়টি কিছুটা তেমনই৷
মারেফত
হকিকত
তরিকত
শরীয়ত
খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে ব্যাপারটি হচ্ছে শরীয়ত আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-নিষেধ, হুকুম আহকাম৷ একজন ব্যক্তি যখন সকল প্রকার হুকুম আহকাম মেনে চলতে থাকবে অর্থাত্ জাহেরী ও বাতেনী এলেম অর্জন করে ফেলেন, তিনি তখন একাকীই তরিকা শিখে যান, অর্থাত্ কি প্রকারে এবং কখন আল্লাহর ইবাদত করাটা মোক্ষম সময়৷ (এখানে ওলী-আল্লাদের জীবনী উজ্জ্বল উদাহরণস্বরুপ) হুযুরপাক আমাদের রাত্রিকালীন ইবাদত করবার প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছেন৷ আর এর জন্যেই হয়তবা বলা হয়ে থাকে যে, আজ পর্যন্ত দুনিয়ার যত সাধক, আওলিয়া আধ্যাত্মিক দৌলত লাভ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই এই রাত্রিকালের সাধনা ও আরাধনার দ্বারাই সব কিছুর সন্ধান পেয়েছেন৷ কোন চাকরির আশায় আমিও আবেদন করব, আপনিও করবেন৷ আপনি যদি এক্ষেত্রে আমার চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন তবে আপনি জানবেন কিভাবে, কোন ভাষায় লিখলে আবেদন বেশি গ্রহণযোগ্য হবে৷ ঠিক তেমনি ইলম চর্চা করতে থাকলে তরিকা আপনাতেই শিখে যাবেন৷
এক্ষেত্রে আবারো একটা কথা উল্লেখ করতে ইচ্ছে করছে, আমার আব্বা বলেন, 'আল্লাহপাক বলেছেন, সেজদায় আমি আমার বান্দার মাঝে কোন পর্দা রাখিনা, অতএব, দোয়া করতে চাইলে মোনাজাতের চেয়ে উত্তম হবে তুমি সেজদায় গিয়ে চাও'৷ এটা কিন্তু একপ্রকার তরিকাই বটে৷
বিভিন্ন মোক্ষম তরিকায় ইবাদত করতে থাকলে একসময় নেক্কার ঈমানদার বান্দা হকিকত জানতে পারে৷ অর্থাত্ আত্মদর্শন ঘটে৷ আয়নার মত নিজের প্রতিচ্ছবি তার কাছে প্রতিফলিত হয়৷ সৃষ্টির গুঢ় রহস্য উন্মোচন হয়৷ যা গোপনীয়৷ কেননা, সৃষ্টির সবকিছু আমাদের জানা নেই, আবিস্কার করছি মাত্র৷ সেই গোপন রহস্য অর্থাত্ সৃষ্টির গোপন রহস্য জানা যায়, হকিকত কি তা বোঝা যায়৷ তারপরেই ঘটে মোক্ষম মুক্তি, মারেফত৷ অতএব, এই মারেফতের রাস্তা এত সহজ নয়৷ ঈর্ষা, হিংসা, মোহহীন কোন কালব তৈরি করা কি এতই সহজ!!!
মারেফতের কিছু কথা আছে যা দৃষ্টত্য শরা-শরীয়তের খেলাফ বলে মনে হবে৷ এক্ষেত্রে আবারো আমার আব্বার কাছ থেকে শেখা, মারিফতি একটি বয়ান উল্লেখ করতে চাই৷
যা হচ্ছে:
"চুরি করুম, হারাম খামু
নাচতে নাচতে বেহেশতে যামু৷"
বলা হচ্ছে, চুরি করে এবং হারাম খেলেই বেহেশত পাওয়া যায়! নাহ্, ব্যাপারটি আসলে তা নয়৷ এর কিন্তু অপব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব৷ প্রকৃতপক্ষে গুঢ় অর্থ হচ্ছে, "চুরি করুম", আপনি সবার সাথে বসে গল্প করছেন, আড্ডা দিলেন৷ রাত গভীর হয়ে যাচ্ছে, সবাই ঘুমাতে চলে গেল, আপনিও গেলেন৷ সবাই ঘুমিয়ে পরল, কিন্তু গভীর রাতে আপনি জায়নামায পেতে বসে গেলেন ইবাদত বন্দেগীতে, যার সম্পর্কে কেউ অবগত নয়৷ সকালে আবার যার যার মত কাজে লেগে গেলেন৷ আপনার গভীর রাতের কর্ম সম্পর্কে কেউ জানতে পারলনা৷ এইভাবে আপনি করলেন চুরি৷ "হারাম খামু", আমরা সবাই জানি 'রাগ'... 'ক্রোধ' হচ্ছে 'হারাম'৷ আপনার অত্যাধিক রাগ উঠেছে, এই ক্রোধকে বের না করে আপনি অবদমিত করলেন অর্থাত্ গিলে ফেলা যাকে বলে৷ তাহলে আপনি কি হারাম খেলেন না!
কাজেই এইভাবে আপনি যদি চুরি করেন এবং হারাম খেতে থাকেন তবে ইনশাল্লাহ মহান রাব্বুলআলামীন বেহেশতের দরজা আপনার জন্য খোলা রাখবেন৷
অবশেষে বলব, এলেম বা জ্ঞান অর্জন করা যায়, হাসিল করা যায়৷ কিন্তু আলেম বা জ্ঞানী হওয়া সবার পক্ষে সম্ভব নয়৷ সবাই হয়ওনা৷ কেননা এলেম জানলেই হয়না, আমলও করতে হয়৷ যেমন আমরা খুব স্পষ্ট করেই জানি ক্রোধ, হিংসা, দ্বেষ, অহং, কাম, লোভ, মায়া এসকল প্রবৃত্তিই সবচাইতে বড় শত্রু, বাঁধা৷ আত্মিক উন্নয়নের পথে চরম অন্তরায়৷ এবং আমরা তা জানার পরও চেষ্টা করিনা এর ভয়াবহ বলয় থেকে নিজেদের মুক্ত করার৷ কাজেই এই প্রবৃত্তিগুলোকে যদি দমন করতে না পারি তবে আমাদের আত্মিক উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়৷ কাজেই দোয়া রইল, আল্লাহ যেন আমাদের এলেমের পথ খুলে দেন, এলেম হাসিল করবার শক্তি দেন এবং আলেম হবার তৌফিক দান করেন৷ আমিন৷
তথ্যসুত্র:
১. বোখারী শরীফ; বাংলা তরজমা ও ব্যাখ্যা সহকারে; হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড প্রকাশিত; সংস্করণ ১লা মার্চ ১৯৯৬ইং;
২. সহীদ বোখারী শরীফ, বাংলা তরজমা, সোলেমানিয়া বুক হাউস হতে প্রকাশিত, সংস্করণ বইমেলা ২০০৬ইং;
৩. মুসলিম শরীফ;
৪. তিরমিযি শরীফ;
৫. দৈনন্দিন ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন;
৬. মুন্তাখাব হাদীস;
৭. পীরবাদের বেড়াজালে ইসলাম- অধ্যাপক এ.এফ.ছাদুল হক ফারুক;
৮. বাউল ও সুফি সাহিত্য- ড. আহমেদ শরীফ
৯. মোকসুদুল মোকমিনিন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন