শনিবার, মে ১২, ২০১২

আমার ভাবনা..."মা দিবস" ঘিরে.........

ব্লগে মোটামুটি কম্পিটিশনের একটা ধুম পড়ে গিয়েছে ইতোমধ্যেই যার হেতু "মা দিবস"।
সোজা সাপ্টা কিছু বলতে চাইছি, হয়তবা অনেকের কাছে দৃষ্টিকটু কিংবা খারাপ লাগতে পারে। কারো মনে আঘাত লাগলে..আগেই ক্ষমা চেয়ে নিলাম। কারণ ইনটেনশন আঘাত দেবার নয়।
 

আমার ব্লগের হাতে খড়ি এই সোনার বাংলাদেশ দিয়েই। ভালোবাসি সকল মতের এই মিলন মেলাকে...স্বতর্স্ফুতভাবে আবির্ভূত বিভিন্ন পোষ্ট যার চরম একটি উদাহরণ। কিন্ত কেন যেন মডুদের খুব বলতে ইচ্ছে করছে....পোষ্ট স্টিকির লোভ এই "মা দিবস" কে ঘিরেই কেন করতে হবে!!! যেখানে আরো অনেক অপশন রয়েছে? "মা" নিয়ে যে কেউ, যখনই কোন মৌলিক কিছু অনুভূতি আঁকবে...মানসম্মত হলে সেটি তখনই স্টিকি হবে। সে মা আমার খরতাপে ইট ভাঙার কাজে থাকা কিংবা ঘরের নিভৃত কোণে...প্রদীপের মতই হোক না কেন। আর তার জন্য শুধু এক জৈষ্ঠ্য মাস এর সীমাবদ্ধতা!! নাহ্, বরং প্রতিটি মাস, প্রতিটি বছর। 

এই ব্লগটি "সকল মতের মিলন মেলা" এটাতো অনস্বীকার্য, তবে তার ভিত্তি কিন্ত আমাদের সোনার দেশ, বাংলাদেশ। আর আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা নিজেরা মুখে খাবার তোলার আগে (যখন সে প্রাপ্তবয়স্ক) "মা"এর মুখে খাওয়া তুলে দেন। আবার বিপরীত চরিত্রও বিদ্যমান। আমাদের কাছে, আমাদের সমাজ, আমাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী...বছরে কোন একটা নির্দিষ্ট দিন থাকেনা, যেদিনে বলব..."মা, আজ সারাটি দিন কাটাবো তোমার সাথে।" ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় এখনো এতো উন্নত কালচার্ড হইনি। (আর আমার মতো আনকালচার্ড, ব্যাকডেটেড মানুষ তা হতেও চায় না।)। হাজারো কাজের চাপে, জটিল জীবনের ব্যস্ততার ভিড়েও ভালো লাগে, বৃষ্টির দিনে মুড়ি মাখানো খাওয়া মায়ের সাথে বসে, কাঁচা আমের ভর্তা খেতে খেতে মায়ের ছোটবেলার কথা শোনা, মিটিং এ যাবার পথে প্ল্যান করা বাড়ি এসে "তমুকদের বাড়ি যেতে হবে", অফিসের কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফোনে বলা "জ্বি, খেয়েছি, তুমি দয়া করে খাও, চিন্তা করো না", হঠাৎ শপিং এ ছোট্ট একটা গিফট নিয়ে নেয়া মায়ের জন্যে, ভালো লাগে বাড়ি ফিরেই "মা" এর হাসিমাখা মুখটা দেখা। পৃথিবীতে এর চেয়ে আপন আর কে আছে!! 
আমাদের সংস্কৃতি আমাদের মনে হয় এটাই শেখায়। আমাদের সংস্কৃতি শেখায়...জন্মের সময় নাড়ি ছিড়ে পৃথিবীর মুখ দেখেছিলাম যার জঠর হতে, তাঁকে বলা "মা, এই জীবন তোমার নামে...." ।নাহ, কোন নির্দিষ্ট দিন আমার জন্য নয়। আমার সারাটি দিন, সারাটি জীবন আমার মায়ের নামে। 

"মা দিবস" এর ইতিহাস অনেকেরই জানা থাকার কথা। আর যদি জানা না থাকে, তবে কষ্ট করে এখনোই গুগলে একটা ক্লিক মেরে দিন। স্কুল শিক্ষিকা "আন্না. এম. জারভিস ১৮৬৪-১৯৪৮ইং" যা করেছিলেন, তার জন্য তাঁকে কি করে সাধুবাদ দেবো তা জানি না। তাঁর জীবনে তাঁর মায়ের মূ্ল্য, মর্যাদা কি..তাঁ তিনি তাঁর কর্মের দ্বারা পৃথিবীকে দেখিয়ে গিয়েছেন। নি:সন্দেহে শেখার আছে অনেককিছু্ আমাদের। আমার এতো "ব্লগর ব্লগর" এর স্পষ্ট হেতু এটাই যে, দেখাদেখি শিখে কোন নির্দিষ্ট দিন নির্ধারিত নয় আমাদের জন্মদাত্রী "মা" এর জন্য, যে "মা" আমাদের জন্ম দিতে গিয়ে এতোটা ভয়ংকর কষ্ট পান, যে আল্লাহপাক সেই মুহুর্তে তার সকল গুনাহ মাফ করে দিয়ে শিশুর ন্যায় তাঁকে পবিত্র করে দেন(সুবহানাল্লাহ)। এই একটি কথাই কি যথেষ্ঠ নয়, "মা" এর মাহাত্ব্য বোঝার? সৃষ্টিকর্তা আমাদের বেহেশত খুঁজতে বলেছেন আমাদের মায়ের পায়ের নিচে। এতো বড় কথার পর আর কোন কিছু কি লাগে?? 

এক গবেষনায় পড়েছিলাম...মানবদেহ ৪৫ ডেল (ইউনিট) পর্যন্ত নাকি ব্যাথা সহ্য করবার ক্ষমতা রাখে। কিন্ত একজন মা যখন তার সন্তান জন্ম দেন তখন তাকে ৫৭ ডেল (ইউনিট) মত ব্যাথা সহ্য করতে হয়। যা মানবদেহের প্রায় ২০টি হাড় ভাঙার মত!!! 

শেষে শুধু একটা কথাই বলব, "মা, তোমার জন্য কোন নির্দিষ্ট দিন আমার কাছে নেই....বরং আমার শ্বাস-প্রশ্বাসের সবটুকু সময়ই তোমার, সে তুমি আমার যতই সাধারণ, ভীরু, নিভৃতকোণীই হওনা কেন" 

সৃষ্টিকর্তা যোগ্য সন্তান হবার তৌফিক দান করুক সবাইকে...কেন যেন মনে হচ্ছে, একমাত্র যোগ্য সন্তান হতে পারলেই মানুষ হওয়া যায়...মোক্ষ লাভ হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন