বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ০৫, ২০১২

ইসলাম-পীরবাদ ও কিছু মতাদর্শ....(১ম)

(প্রথমেই বলে নেবো, ধর্ম বিষয়ের উপর কোন স্কলার আমি নই৷ কাজেই ভুলত্রুটি থাকতেই পারে স্বাভাবিকভাবে৷ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি৷ তবে প্রবন্ধটি লেখার সময় যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি বিভিন্ন রেফারেন্স দেবার৷ ) 


পীরবাদ ইসলামবর্জিত ভিন্ন একটি দর্শন: 
কিছু কিছু বিষয় থাকে যা সত্যিই খুব স্পর্শকাতর হয়, যেমন: ধর্ম৷ যোগ্য উদাহরণ হিসাবেই বলা চলে কেননা আজ পর্যন্ত এই বিষয় ঘিরে সমালোচনা হয়েই আসছে এবং চলবেই৷ কখনো কখনো এই ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা (সঙ্গত কারণেই সমালোচনা বলবনা) সমুচিত নয় আবার কখনো উচিতও৷ কেননা আলোচনা না করলে একে বোঝাও যায়না এবং সাথে করে এর ব্যাপ্তি বা প্রসার রোহিতও হয়৷ একে বোঝার সীমাটা সংকুচিত হয়ে আসে আপনাতেই, যদি না আলোচনা না হয়৷ আর এটাই স্বাভাবিক৷ 

মুসলমান গোষ্ঠির ধর্ম "ইসলাম" এ সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় হচ্ছে এর আধ্যাত্মিকতা৷ ইসলামে প্রথম কথাই হচ্ছে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" অর্থাত্‍ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নাই৷ একক ও অদ্বিতীয়, তিনি লা শরীক এবং এটাই তাওহীদ৷ ইবাদত বন্দেগীর ব্যাপারে তাঁর কোন শরীক নেই৷ অতএব, এখানে দৈত্ববাদের কোন প্রশ্নই উঠেনা৷ আল্লাহর একাত্ববাদে বিশ্বাস রেখেই প্রদত্ত বিধি-বিধান মেনে জীবন যাপন করাই ইসলামের মূল৷ 

এই ইসলামে ইলম বা জ্ঞান দুই প্রকার৷ 
(ক) জাহেরী (প্রকাশ্য); 
(খ) বাতেনী (অপ্রকাশ্য)৷ 


জাহেরী জ্ঞানগুলো হচ্ছে তাওহীদ, নামায, রোজা, হজ্ব ও যাকাত৷ আল্লাহ প্রদত্ত বিভিন্ন বিধি-নিষেদ, হুকুম-আহকাম৷ যা প্রকাশ্য৷ এবং বাতেনী ইলম বা জ্ঞান হচ্ছে কাম, ক্রোধ, হিংসা, দ্বেষ, লোভ, মোহ, মায়া ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় দ্বারা মনকে কলুষিত হতে না দেয়া, কলবকে পরিস্কার রাখা৷ ঈমানদার ও তাকওয়া অর্জনকারী হতে হলে কলবকে কলুষিত মুক্ত রাখতে হবে৷ এই বাতেনী জ্ঞান বা চর্চাই হচ্ছে ইলমে তাসাউফ৷ তাসাউফের জ্ঞান অর্জন না করলে পরিপূর্ণ ঈমানদার কখনোই হওয়া যাবেনা৷ এজন্য হুযুরপাক হযরত মুহাম্মদ (সা: ) স্পষ্ট করেই বলেছেন: 

"জেনে রেখো! শরীরের মধ্যে এক টুকরো গোশত আছে, যদি তা পরিশুদ্ধ হয়, তবে গোটা শরীরই পরিশুদ্ধ হয়৷ আর যদি তা খারাপ হয়, তবে সমস্ত শরীরই খারাপ হয়৷ মনে রেখো, তা হলো কালব বা দিল৷" 
(বোখারী ও মুসলিম শরীফ) 
কিন্তু আমাদের সমাজের কিছু লোক (অশিক্ষিত গোঁড়া এবং শিক্ষিত গোঁড়া) এই অপ্রকাশ্য বা বাতেনী জ্ঞান বা ইলম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতার্দশ রাখেন৷ যা প্রকৃতপক্ষে ধর্মের সুস্থ্যধারাকে প্রতিনিয়ত ব্যাহত করে৷ একটি মতার্দশ হচেছ পীর ও মুরিদী চর্চা৷ একে ইসলাম সম্পর্কহীন দর্শন বলব শুধুমাত্র এই কারণগুলোর জন্যই: 

১. পীর না ধরলে আখিরাতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়৷
২. পীরকে ভজতে হবে আগে৷ আমল করবার সময় পীরের চেহারা মনে করে আমল করতে হবে৷
৩. পীরকে ভজলেই ঈশ্বরের সান্নিধ্য বা নৈকট্য লাভ করা যায়৷ কোরআন হাদীসের আগে পীর সত্য ও বড়৷
৪. পীরের মাযার মানা এবং পীরের নামে মান্নত করে চাইলে তা পূরণ হয়৷
৫. পীরকে ঔসিলা করে চাইলে মনোবাসনা পূরণ হয় এবং পীর মুরিদের, আখিরাতের সকল দায়-দায়িত্ব নেয়৷ 


পীরবাদের ভিত্তিগুলো, ইসলামের মূল কথা "আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবূদ নাই" এর সাথে কোনভাবেই খাপ খায় না বিধায় একে ইসলামসম্পর্কহীন দর্শন বলতে হবে৷ তার আগে "পীর" এই নামটি বা দর্শন সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু জেনে নেয়াটা দরকার৷ 


পীর: 
পীর শব্দটি একটি ফারসি শব্দ৷ কোরআন ও হাদীসের পরিভাষার অন্তর্ভুক্ত কোন শব্দ নয়৷ পারস্যের অগ্নিপূজারীদের পুরোহিতকে পীরে মুগাঁ বলা হতো৷ অন্যদিকে পানশালার মদ বিক্রেতাকেও "পীরে মুগাঁ" বলা হতো৷ কেননা আধ্যাত্মিক প্রেমকে রুপকভাবে মদের সাথে তুলনা করা হয়৷ ফারসি এই কবিতায় আছে: 

"বমায়ে শাজ্জাদাহ রঙ্গীন কুন
গিরাত পীরে মুগাঁ গোয়াদ
সে সালেক বেখবর নাবুদ
যে রাহে রাসমো মানযিলহা৷" 

অর্থাৎ: পীরে মুগাঁ বা শুড়ী মশায় যদি বলেন, তাহলে তুমি জায়নামাযকে মদের দ্বারা রাঙিয়ে তুলো৷ কেননা, পথের সন্ধান গুরুজী ভালভাবেই অবগত আছেন৷ 

পীরকে মুর্শিদও বলা হয়৷ তবে মুর্শিদ বলা হয় বাউল তত্ত্বের পরিভাষায়৷ আর মুরীদ হচ্ছে শিষ্য৷ যারা পীরকে শিক্ষক হিসাবে গ্রহণ করে, পীরের হাতে হাত রেখে ওয়াদা করেন৷ অর্থাত্‍ বায়াত গ্রহণ করেন৷ এদের কথায় এরা শরীয়তপন্থি নয় মারেফতীপন্থি এবং বিভিন্ন তরিকায় ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করে থাকেন৷ 

জীবনের পথে যেকোন জ্ঞানার্জন শিক্ষককে অস্বীকার করে সম্ভব নয়৷ একজন শিক্ষকের দারজা বা মাহাত্ব্য, মা-বাবা পরেই, তা হুজুরপাক খোদ নিজ মুখে বয়ান করেছেন৷ অতএব কোন গুরু বা শিক্ষক ছাড়াই এলম অর্জন করা যায় তা দাবী করাও, চরম মুর্খতার পরিচয় দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়৷ কিন্তু এখানেই কথা, পরীক্ষায় বসব আমি, খাতায় লিখব আমি এবং তার ফলাফলও হবে একান্তই আমার৷ আমার শিক্ষক বা গুরু আমাকে বড়জোর পথ বাতলে দিতে পারেন যে, কোনভাবে পড়লে, লিখলে ফলাফল ভালো হতে পারে৷ পরীক্ষার খাতায় উনি লিখে দিতে পারবেন না৷ ঠিক তেমনি কোন পীর তার মুরীদের শাফায়াতের সকল দায়-দায়িত্ব নিতে পারেন না৷ 

আর এর জন্যেই বলা হয়েছে: 

"ওয়ামা খালাকতুল জিন্নাহ ওয়াল ইনছা ইল্লা লিয়া'বুদুন" 
অর্থাৎ, আমি জি্বন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এজন্যেই যে তারা আমার ইবাদত বন্দেগী করবে৷ 
(সূরা যারিয়াত: ৫১:৫৬)
অতএব, আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী প্রত্যেক বান্দাকেই নিজ নিজভাবে করে যেতে হবে৷ কারোও ইবাদত কেউ করে দেয়না৷ অনেক মুরীদগনই বলেন যে, নামায তাদের পড়তে হবে না কেননা, তাদের নামায তাদের পীরই পড়বেন৷ তাদের শাফায়াত করবেন তাদের পীর৷ যদি তাই হয়, তবে আমাদের অর্থাত্‍ শেষ নবীর উম্মত যারা, তাদেরতো কোন আমল করবারই প্রয়োজন পরেনা৷ কেননা মাকামে মাহমুদে অর্থাত্‍ প্রশংসনীয় স্থানে অবস্থান করবার একমাত্র হকদার হুযুরপাক নবীকরিম (সা  এবং আমরা তাঁর উম্মত৷ 

"আছা আই ইয়াব আছাকা রাব্বুকা মাকামাম মাহমুদা৷" 
(সূরা বনী ইসরাইল: ১৭:৭৯) 
অর্থাৎ, আশা করা যায়, আপনার রব আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদে (প্রশংসিত স্থানে)৷ 

শাফায়াত দুই প্রকার হয়ে থাকে৷ শাফায়াত কুবরা, যা শুধুমাত্র নবীজীর জন্য এবং শাফায়াত সুগরা যা অন্যান্য আলেম বুজুর্গ, ওলী আল্লাহদের জন্য৷ 

হাদীসে আছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা: ) হতে বর্ণিত রাসূল (সা: ) ইরশাদ করেন- "প্রত্যেক নবীকে একটি করে দোয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ যে দোয়া আল্লাহপাক অবশ্যই কবুল করবেন৷ সকল নবী তাঁদের দোয়া করে ফেলেছেন৷ আর আমি আমার দোয়াটি কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের শাফায়াতের জন্য রেখে দিয়েছি৷" 
(মুসলিম শরীফ (বাংলা) ১ম খন্ড, ৩৮৬নং হাদীস) 
কাজেই উপরোক্ত অঙ্গীকার থেকে এটা তো স্পষ্টই যে, হুযুরপাক আমাদের জন্যে শাফায়াত করবেন৷ তবে কি আমাদের আমল করা ছেড়ে দেয়া উচিত্‍ নয়!!! 


"লক্ষ্য কোটি সুরত নিয়ে
সাজলে তুমি নিরাকার
প্রভু, সাজলে তুমি নিরাকার৷" 



ইসলামে "ইহসান" এর কথা বলা হয়েছে৷ "ইহসান" একটি আরবী শব্দ৷ যার অর্থ হচ্ছে সুন্দর ব্যবহার৷ মহান রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় উত্তমরুপে ইবাদত করা এবং তাঁর সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা৷ কোরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে: 

"যে ব্যক্তি ইহসানকারীরুপে আল্লাহর নিকট একান্তভাবে আত্মসমর্পণ করে, সে তো মজবুত হাতল ধারণ করে, আর সমস্ত কাজের ফলাফল তো আল্লাহরই ইখতিয়ারে৷" (সূরা লুকমান: ৩১:২২)
ইবাদতকারী ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহরই ইবাদত করবে৷ এ প্রসঙ্গে হুযুরপাক বলেছেন: 

"তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন তুমি তাঁকে দেখছো, আর তুমি আল্লাহকে দেখতে না পেলে অন্তত এটা ভাববে যে, তিনি তো তোমাকে দেখছেন৷" 
(মুসলিম শরীফ, সুত্র মিশকাত:১১ পৃষ্ঠা) 

এখানে ইবাদতের সময় কনসেনট্রেশনের কথা বলা হয়েছে৷ অর্থাত্‍ এক আল্লাহতে, কেন্দ্রতে চিন্তাকে আবদ্ধ করা এবং এটা স্বাভাবিক কেননা, পড়ার সময় যদি চিন্তা পড়ার উপর না থাকে তবে সেই পড়াটা আত্মস্থ হয়না, খাওয়ার সময় যদি চিন্তা অন্য কোথাও থাকে তবে খাবারটাকে উপভোগ করাও যায়না৷ আর এরজন্যই উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণিত৷ ইবাদতের সময় সম্পূর্ণ মনোসংযোগ দিতে হবে৷ কিন্তু তাই বলে এটা নয়, ইবাদতের সময় আল্লাহকে কোন ব্যক্তিরুপে চিন্তা করে নিতে হবে৷ তাহলে তা শিরকের পর্যায়ে চলে যায়৷ যখন আমি আমার পরীক্ষকের সামনে বসে পরীক্ষা দেই তখন তার দিকে তাকিয়ে খাতায় লিখি না৷ বরং স্পষ্ট অনুভব করি যে আমার পরীক্ষকের দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ৷ এই "অনুভব" এর কথাটাই রাসূলকরিম বোঝাতে চেয়েছেন৷ 


"মন পাগলরে গুরু ভজনা
গুরু বিনে শান্তি পাবে না৷
গুরু নামে আছে সুধা
যিনি গুরু তিনিই খোদা
মন পাগলারে গুরু ভজনা৷" 


পীরকে ভজলেই আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভ করা যায়! যদি পীর ভজনই সব তবে আল্লাহর নৈকট্য লাভের কি দরকার, যেহেতু কোরআন হাদীসের আগে পীর বড় এবং সত্য (নাউজুবিল্লাহ)৷ আল্লাহতালা বলেছেন: 

"আমি এ জন্যই রাসূল প্রেরণ করেছি যেন আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তাঁর আনুগত্য করা হয়৷" (সূরা নিসা: ৪:৬৪) 
আরোও বলেছেন, 

"কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল৷" 
(সূরা নিসা: ৪:৮০) 

এর অর্থ কিন্তু আহাদ ও মুহাম্মদ এক, তা নয়৷ নবী-রাসূলগণ নিষ্পাপ৷ এবং সবচাইতে নিষ্পাপ হচ্ছেন আমাদের প্রিয় নবীকরিম (সা: )৷ আল্লাহ তাঁকে দ্বিধাহীনভাবে অনুসরণ করতে বলেছেন৷ আর কোরআন হাদীস অমান্য করে যদি পীরের দারজাই বড় হয়ে থাকে (পীরের কথাই সবার আগে!) তবে, এটা সরাসরি হুযুরকে অবিশ্বাস করা, সর্বোপরি আল্লাহর নির্দেশ কোরআনকে অমান্য করা৷ শিরকি এবং গোনাহ ছাড়া এটা আর কিছুই না৷ 


বলা হয়, পীরদের নামে মান্নত করে কিছু চাওয়া কিংবা ঔসিলা করে চাইলে (পীর বা পীরের মাযারের নামে) তা পূরণ হয়৷ এবং এর সত্যতা প্রমাণের জন্য পীর/মুরীদগণ কোরআনের আয়াতের কিছু অপব্যাখা দেন৷ কোরআনে একটি আয়াত আছে: 

"ইয়া আইয়ু্যহাল-লাযীনা আ-মানুত্তাকুল্লা হা ওয়াবতাগু ইলাইহিল ওয়াসীলীহাতা ওয়া জা-হিদু ফী ছাবিলিহি লা আল্লাকুম তুফলিহুন৷" 
(সূরা মায়েদা: আয়াত ৩৫) 
অর্থাত্‍ হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর সান্নিধ্য অন্বেষণ কর ও আল্লাহর পথে জিহাদ করতে থাকো৷ আশা করা যায় যে, তোমরা সফলকাম হবে৷ 

এখানে "ওয়াসীলা" শব্দটির অর্থ "মাধ্যম"৷ আর পীরবাদীদের এখানেই জোর দাবি যে, উল্লেখিত মাধ্যমই হচ্ছেন তারা৷ যদি তাই হয়, তবে রাসুলপাকের জমানায় মক্কার কাফের মুশরিকরা কিছু মুর্তির উপাসনা করত এবং তাদের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তারা বলে: 

"আমরা ঐ সমস্ত মুর্তিগুলোর ইবাদত এজন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়" 
(সূরা ফাতহ: আয়াত:৬) 

তাহলে এখানেও ওয়াসিলা করে প্রার্থনা করা হচ্ছে৷ এটা কি মিলে যাচ্ছেনা?? 

এটা বলবনা যে, ওয়াসিলা করে দোয়া করা হারাম৷ নাহ্, তবে সঠিকভাবে তা প্রয়োগ করতে হবে যেমন: ঈমানের ওয়াসিলা করে দোয়া চাওয়া, আল্লাহতালার নামের ওয়াসীলায়৷ যেমন: 

"আল্লাহতালার রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ৷ অতএব, ঐ নামগুলির মাধ্যমে তাঁকে ডাক৷" 
(সূরা আরাফ, আয়াত: ১৮০) 

নেক আমলের ওয়াসীলা করে প্রার্থনা করা, যেমন: রাসুলপাক (সা: ) ইরশাদ করেছেন- 

'তোমার মনের ইচ্ছাকে পূরণ করতে অধিক সিজদাকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ কর৷'
(মুসলিম শরীফ) 

আল্লাহর রাসুলের ওয়াসিলায়৷ এক্ষেত্রে একটা কথা উল্লেখ করছি, আমার আব্বা যখন মোনাজাত করেন তখন বলেন-'আমাদের রাসুলপাক যেসব কল্যাণ চেয়েছেন, আল্লাহ আমাদের সেইসব কল্যাণ দান কর এবং যেসব অকল্যাণ থেকে মুক্তি ও পানাহ চেয়েছেন সেসব অকল্যাণ থেকে আমাদের হেফাজত কর৷' 
ব্যক্তিসত্ত্বার দালালী ইসলাম অনুমোদন করে না৷ কিন্তু পীরবেশধারী ব্যক্তিরা "ওয়াসিলা" হওয়ার দাবীর মাধ্যমে সরল সাধারণ নিরীহ মানুষদের প্রতারিত করতে থাকে প্রতিনিয়ত, তাদের দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে৷ সাধারণ মানুষগুলো অন্ধ হয়ে পীরের জন্য চাল, অর্থ যোগাড় করে, পীরের পা টেপা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে (যেখানে আমাদের হুযুরপাক তাঁর কদম মোবারকে কোন সাহাবীদের হাত দিতে দেন নি), যেখানে নিজ গৃহে হয়ত তাদের অসুস্থ মায়ের সেবা করারও তাদের সময় ও ইচ্ছে হয় না৷ 


মান্নত করে চাওয়াটা বিশেষত আমাদের দেশে এখন প্রায় একটি কালচারের মতই দাড়িয়েছে৷ শিক্ষিত ও অশিক্ষিত দু'দলের মধ্যেই দেখা যায় যে, কিছু হলেই মান্নত করা হয়৷ এই মান্নতও দুইভাবে করা যায়৷ ১/ শরীয়ত সম্মত মান্নত এবং ২/ শিরকযুক্ত মান্নত৷ 
উদাহরণস্বরুপ কোরআনের একটি আয়াত থেকে বলছি: 

"যখন ইমরানের স্ত্রী (মরিয়মের মা) বলেছিলেন- হে আমার প্রতিপালক, আমার গর্ভে যা আছে তা একান্তভাবে তোমারই জন্য উত্‍সর্গ করলাম" 
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৫) 

এখানে একজন মায়ের এইরুপ মান্নত সম্পূর্ণরুপে জায়েজ৷ 

কিন্তু পীরের নামে বা মাযারের নামে মান্নত করা হলে তা সম্পূর্ণরুপে হারাম৷ মান্নত করবার নামে পশুও জবাই করা হয়ে থাকে৷ আর এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কোরআনে উল্লেখ আছে, 

"তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জানোয়ার, রক্ত ও শুকরের মাংস এবং আল্লাহ ব্যতীত যা অন্যের উদ্দেশ্যে উত্‍সর্গ করা হয়৷" 
(সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩) 

আর কবর বা মাযার যিয়ারত করবার প্রসঙ্গে এই হাদীসটি উল্লেখ করতে চাইছি, "যায়েদ বিন সাবেত (রা: ) রেওয়াত করেন, নবী করিম (সা: ) বলেছেন- কবর যিয়ারতকারী, কবরে মসজিদ নিমার্ণকারী ও সেখানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনকারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ৷" 
(তিরমিযি, আবু দাউদ, নাসাঈ ইবনে মাজা) 

অতএব, কোনভাবেই পীরবাদের ভিত্তিগুলোর সাথে ইসলামের মূল ভিত্তিগুলোর কোনদিক থেকেই সাদৃশ্য দেখছিনা৷ মূল বিষয়গুলো সব ক্ষেত্রেই ভিন্ন, বলতে গেলে পুরোপুরি বিপরীতমুখী৷ কাজেই আমি দ্বিধাহীনভাবেই স্বীকার করব, পীরবাদ সম্পূর্ণ ইসলামবর্জিত একটি ভিন্ন দর্শন ব্যতীত আর কিছুই নয়৷ উল্লেখ্য হুযুরপাক (সা: ) বলেছেন- "আল-ওলামাউ ওয়ারেছাতুল আম্বিয়া" অর্থাত্‍ আলেমগণ নবী রাসূলের উত্তরাধিকারী৷ তাই আলেম হওয়াটাই সম্মানের ব্যাপার, পীর হওয়া নয়৷ 

(চলবে....)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন