বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৬, ২০১৫

A Reflection on Love...By Yasmin Mogahed

এই সবকিছুই "ভালোবাসা"। প্রতিটি খন্ডই। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তর। এ সেই "ভালোবাসা", যা দিয়ে রচনা হয় কবিতা। শব্দ দিয়ে গড়া উপন্যাসের ভালোবাসা। গানের মধ্যকার ভালোবাসা। কোন সিনেমার খাপে খোঁজা এই সেই "ভালোবাসা"।
সন্তানের প্রতি মায়ের সেই ভালোবাসা, ভালোবাসা পিতার জন্যে সেই মেয়েটির। এ সেই "ভালোবাসা" যা শেখায় স্বাধীন হওয়া আবার যা শেখায় নিজের অস্তিত্বকে ভুলে যেতে। সেই "ভালোবাসা" যেখানে একবার বিজয়ের স্বাদ আবার কখনো হেরে যাওয়া। "ভালোবাসা"... যা তুমি খুঁজে বেড়াও এদিক সেদিক।
"ভালোবাসা" যার জন্যে তুমি বাঁচতে শেখো আবার জানো কিভাবে আগলে নেয়া যায় মৃত্যুকে। "ভালোবাসা" যা রক্তাক্ত করে পুরুষকে। এ সেই "ভালোবাসা" যা তরবারিকে বাধ্য করে হরণ করতে। ভালোবাসা সেই রুপকথার কিংবা বিষাদময়, কোন ট্রাজিডির।
এ সবকিছুই "প্রতিফলন" শুধুমাত্র।
একই প্রতিধ্বনি, একই উ্ৎসের, একই "ভালোবাসা" যা জানো তুমি, যা জানি আমি। কারণ একে আমরা ঠিক জানার অনেক আগে থেকেই জানি। ভালোবাসতে জানবার বহু আগেই যে আমরা পেয়েছি "ভালোবাসা"! তুমি দেবার বহু আগেই পেয়েছো কিংবা জেনেছো কি আছে তোমার বিলিয়ে দেবার। এটা হচ্ছে "ভালোবাসা"... যাকে জানবার জন্যেই সৃষ্টি, তোমার হৃদয়। এ সেই "ভালোবাসা" যা বাকি সব ভালোবাসাকে করে সৃষ্টি, রাখে সযতনে আগলে।
এ সেই "ভালোবাসা" যার অস্তিত্ব বহু আগে থেকেই....থেকে যাবে অনন্তকাল বাকি সব চলে গেলেও, হারিয়ে গেলেও।
এ সেই "ভালোবাসা" যার অস্তিত্ব বহু আগে থেকেই...থেকে যাবে এর "প্রতিধ্বনি" অনন্তকাল। বাকি সব হারিয়ে গেলেও।


মূল: Reclaim Your Heart- By Yasmin Mogahed

(অনুবাদ করবার ব্যর্থ চেষ্টা। কেননা কোন অনুবাদই পারফেক্ট হতে পারেনা। লেখকের সাথে আরেক লেখকের শব্দ কখনোও এক হয়না। কিন্তু অনুভূতিগুলো তো এক হতে পারে!!! তারই প্রয়াস। দোষ কি তা তে!!! )

শুক্রবার, এপ্রিল ১০, ২০১৫

"অশ্বযোনি".....বাণী বসু....

"এ এক নায়িকার উপাখ্যান। জীবনের প্রতি পদে যার বাঁধন.......এক পরিবার তত্ত্ব তাকে শয়ন-স্বপনে-জাগরণে অশরীরী এক ইচ্ছাশক্তির মত তাড়া করে বেড়ায়। এই অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে পাথেয় করে সে চায় এগিয়ে চলতে।............তার সামনে নতজানু হতে বাধ্য হয় অন্যরা, যারা এতদিন ক্রমাগত তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে আসছে।"
ভেঙ্গে ভেঙ্গে ভূমিকার কিছুর কথা তুলে ধরলাম।
"নিপুন দক্ষতার সঙ্গে এই উপাখ্যান বুনেছেন এ-সময়ের প্রথম সারির লেখিকা বাণী বসু। এ কোনও ইচ্ছাপূরণের রূপকথা নয়। তবে এ-কাহিনির প্রতি ছত্রে পাঠক হয়তো খুঁজে পাবেন নিজেকে...।"
বাণী বসু...অনেকেরই চেনা নাম। এ কালের একজন শক্ত লেখিকা। জন্ম কলকাতায় ১১ ই মার্চ ১৯৩৯। আম
আমার পড়া প্রথম বই ‍"অষ্টম গর্ভ" তারপর "মৈত্রেয় জাতক"। "মৈত্রেয় জাতক" লেখা বুদ্ধের জীবনের উপর...যাক গে এখানে সেটা আর কপচাবোনা। কথা হোক্ শুধুই "অশ্বযোনি" নিয়ে। মজার কথা হচ্ছে আমার এক সখী নাক কুচকে বলেই ফেলে..."এ আবার কেমন নাম!" বৎস এ যে বাণী বসু!!
এর লেখার স্টাইলটা বড্ড নজর কাড়ে। দুরদেশের লাইব্রেরীতে দেশীয় বই দেখে মনটা আনন্দে ভরে যায়...আর চোখ জুড়ায় বাণী বসু কে দেখে। ভালো লাগে কেননা... লেখেন এমনভাবে যেন ......হুমম.. ঠিক যেন ধূলোর আস্তর সরিয়ে কোন ছবির স্পষ্টতা ফুটিয়ে তোলা। বর্তমানে কথা বলতে বলতে অতীতের এক ফ্ল্যাশব্যাক।
বইটি শুরু হয় এমনভাবে....
"যখন বাড়ি ফিরছিলুম আমি একা হলেও একা ছিলুম না। আমার সঙ্গে ছিল চোখের ও শরীরের ভঙ্গি সব, শিল্প যাদের স্থির করে দিয়েছে কিন্তু তাদের জঙ্গম জীবনময় চরিত্রকে পাল্টাতে পারেনি। জঙ্গমকে ধরতে পারাই বোধহয় শিল্পের কঠিনতম সাধনা।"
যে নায়িকা কে নিয়ে লেখা তার অতীত জীবন বড্ড অবহেলিত। বেড়ে উঠার পরিবেশ ছিল বদ্ধময়। সব থেকেও কিছু নেই। মহর্ষির মতন একজন পিতা, আর মোনালিসার মতন ধোঁয়াটে একজন মা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় কতনা কালচার্ড পরিবেশ। ভেতরে... জটিল-কুটিল স্বার্থসর্বস্ব কিছু জীবের বসবাস। সেই পরিবেশে বেড়ে উঠা এক শিশুর মনে ছিল জ্ঞানের তীব্র আকাঙ্খা। যে যার স্বার্থের চিন্তায় মত্ত। কোনরকমভাবে দাদাভাই বাগে এনে স্কুলে ভর্তির হবার মধ্য দিয়ে ছোট্ট সেই শিশুটি শিখে যায়....
"যেটা চাই, নিজে নিজে আমায় সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।"
লেখিকা যেন গল্প বলতে বলতে কোথাও হারিয়ে যান...সাথে আমিও হারাই। কঠিন বাস্তবতার সাথে সংঘাত, তবুও প্রকৃতির সাথে একাত্মতায় খুঁজে নেন ক্ষণিকের সাত্বনা।
মন ছুঁয়ে যায়...
"জানালা দিয়ে চৈত্রের প্রথম বৃষ্টির সুগন্ধ ভিজে হাওয়া হু হু করে ঢুকছে, সর্বাঙ্গ যেন জুড়িয়ে যাচ্ছে মায়ের আদরে।"
এমন করে কখনো ভাবিনি.....।
একটা কথা অনেক মজার লেগেছে....
"একজন বিশ্রী আলগা অসংযমী মানুষ যেমন অপমানকর, অসহ্য, একজন আটকাঠ বন্ধ করা লোকও তেমনই অসহ্য হতে পারে।"
সত্যিই কিন্তু!
ঘটনাগুলো এমনভাবে বিচরন করতে থাকে যে অনেক কিছু মনে হয়..নাহ্, লেখিকা বড্ড বেশি অতিরঞ্জিত করছেন আবার মনে হয় নাহ্, এমনতো হয়েই থাকে। তুমি, আমি, আপনি...কতটাইবা দেখেছি, পলেস্তারের নিচে চাপা পরা মানুষের জীবন।যান্ত্রিকতার কর্কশ শব্দের ভারে হারিয়ে যাওয়া হাজারো কান্না...চিৎকার।
নায়িকার মোনালিসার মত মায়ের কথা কিছু বলতে চাইছিনা। পাঠক নিজেই পড়ে জেনে নেবেন। উনি নিজেই এক দুর্দান্ত সাসপেন্স নায়িকার কাহিনীতে।
লেখিকা এক বিদেশীর আবির্ভাব ঘটায় কাহিনীতে, তার সাথে এক দর্শনেরও। আর এই দর্শন, মনের আগোচরেই আমাদের জীবনে তার ছাপ রাখছে। বিদেশী 'নীল' বলে...
"এই পৃথিবীতে পরিবার পরিবারে জন্মায় না। বাবা, মা, ভাই-বোন, দাদা, দিদি এই সমস্ত সম্পর্কগুলো ছড়িয়ে থাকে সারা জগৎ জুড়ে, তাদের খুঁজে পেতে হয়।"

প্রায় প্রতিটি পাতায় অদ্ভুত ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়েছি.....কখনো কখনো সত্যিই হারিয়েছি। প্রেমে পড়েছি "বাণী বসু"র বলতে দ্বিধা নেই। আজ আর বেশি ঘাঁটবোনা। শেষের পাতার কিছু লাইন.....
"মাত্রই তিনজন। সেই তারা ভরা রাত। আমরা সেই তারাভরা আকাশের দিকে ঊর্ধ্বমুখ। কত না আলোকবর্ষ পার হয়ে আমাদরে স্পর্শ করতে আসছে ওরা। এখন হয়তো আর নেই, পুড়ে শেষ হয়ে অনন্তে মিলিয়ে গেছে। কিন্তু যতক্ষণ ছিল জ্বলজ্বলে হয়ে বেঁচেছে। এখনও যখন আমাদের চোখে বেঁচে আছে, তখন নিশ্চয় একরকম করে বেঁচেই আছে। কে বলবে সেই বেঁচে থাকার মানে কী? বিজ্ঞান হয়তো কোনওদিন আয়ুর অন্য কোনও সংজ্ঞা বার করবে। এখন সকলই গুহায় নিহিত।.............এ সেই আসল অশ্বিনীর আকাশ ভরা হ্রেষা। সে ছুটছে, তীব্র নীল জিজীবিষায় ছুটে যাচ্ছে অরণ্যের পর অরণ্য নক্ষত্রের পর নক্ষত্র, আরোও ছায়াপথ আরও নীহারিকার রুপোলি নির্জন, দশ দিকে দিঙ্নাগেদের উদ্ধত তর্জন বিশাল বিশাল লাফে পার হয়ে ...ছুটছে।"

সূর্য-দীঘল বাড়ী...A Cursed House!


আবার তারা গ্রামে ফিরে আসে। পেছনে রেখে আসে স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, মা-বাপ, ভাই-বোন। ভাতের লড়াইয়ে তারা হেরে গেল।
এই হচ্ছে শুরু......"সূর্য-দীঘল বাড়ী" এর।
আবু ইসহাকের এ এক স্মরণীয় সাহিত্যকীর্তি। বাংলা সাহিত্যের সার্থক উপন্যাস হিসাবে সমাদৃত। অুনদিত হয়ে বইটি বিভিন্ন বিদেশী ভাষাতেও প্রকাশিত হয়েছে। আবু বাশার মোহাম্মদ ইসহাক (আবু ইসহাক, ১৯২৬-২০০৩) এর জন্ম শরীয়তপুর জেলায়। সাহিত্যের সংখ্যা হয়ত বেশী নয় তবে যাই সৃষ্টি করেছেন তা এক একটি জেমস্ বললে ভুল হবে না।
আফসোস হচ্ছে কেমন করে যেন এই সাহিত্যটা পড়া হয়নি আগে। বঞ্চিত মনে হচ্ছিল নিজেকে। যাগ্ গে এ নিয়ে তো রিভিউ দেবার ক্ষমতা আমার মোটেও নেই । শুধুমাত্র নিজের অনুভুতিগুলোকে নিয়েই নাড়াচাড়া। সাধারণের সাহিত্যানুশীলন...এই আর কি।

এক মুঠো ভাতের জন্যে বড়লোকের বন্ধ দরজার ওপর মাথা ঠুকে ঠুকে পড়ে নেতিয়ে। রাস্তার কুকুরের সাথে খাবার কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে ক্ষত-বিক্ষত হয়। দৌলতদারের দৌলতখানার জাঁকজমক, সৌখিন পথচারীর পোশাকের চমক ও তার চলার ঠমক দেখতে দেখতে কেউ চোখ বোজে। ঐশ্বর্যারোহীর গাড়ীর চাকায় নিষ্পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায় কেউ বা।..............................তাদের শিরদাঁড়া বেঁকে গেছে। পেট গিয়ে মিশেছে পিঠের সাথে। ধনুকের মত বাঁকা দেহ- শুষ্ক ও বিবর্ণ।
পঞ্চাশের মন্বন্তর এমনই ভাবে ফুটে উঠে। সহজ অথচ কত বৃত্তান্ত।

কাহিনী জয়গুনের...তার মেয়ে মায়মুন, ছেলে হাসুর। আর শফির মায়ের। আরো কাসুর, করিম বকশ, গদু প্রধান এর। আর 'সূর্য-দীঘল বাড়ী' !! এ হচ্ছে এর নিজের ইতিহাসেই এক কলংক, অভিশাপ। পূর্ব-পশ্চিম প্রসারী বাড়ী তাই সূর্য-দীঘল বাড়ী।

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কুসংস্কারগুলো আপনাতে্ই কখন যেন মাথা থেকে পায়ের নিচে চলে আসে। ক্ষুধার কষ্ট বড় করুন। লেখক বলেছেন..
"রমজান মাসের রোজার চেয়েও যে ভয়ঙ্কর এ রোজা। রমজানের একমাস দিনের বেলা শুধু উপোস। কিন্তু তার বারোমেসে রোজার যে অন্ত নেই।"
অসহায় অবস্থায় অন্যের দারস্থ না হয়ে খেটে খাইতে গেলেও..সংগ্রাম করতে গেলেও অন্ধ সমাজের চোখ রাঙ্গানো এড়ানো বড় কঠিন। অন্ধ সমাজের সব কিছুর ব্যাখ্যা, সংগাও অন্ধ। সেখানকার ডিকশেনারিতে "মানবতা" শব্দটির নেই কোন অস্তিত্ব।
অথচ অনুভূতিগুলো কতটা গভীর। কিভাবে? মানুষ সত্যিই বিচিত্র। জয়গুনকে "তোবা" করতে হবে। না হয় মেয়ের বিয়ে আর দেয়া হবেনা। শুধু সে সময়টার জন্যে "তোবা" অথচ নাহ্...জয়গুনের বিবেক তাকে শিখিয়েছে "তোবা" একবার করলে তা সে ভাঙতে পারবেনা্। এই মানসিকতাকে কোন আঙ্গিকে বিচার করা যায়? আর সেই "তোবা"ই ভেঙে ঘরের বাইড়ে যেতে হয় যখন আরেক নারী তাকে সেই একই ধর্মের বাণী শোনায়..
"না খাইয়া জানেরে কষ্ট দিলে খোদা ব্যাজার অয়। মরলে পরে খোদা জিগাইব, তোর আত-পাও দিছিলাম কিয়ের লেইগ্যা? আত দিছিলাম খাটবার লেইগ্যা, পাও দিছিলাম বিদ্যাশে গিয়া ট্যাকা রুজি করনের লেইগ্যা। .....
"আত আছিল, পাও আছিল
আছিল গায়ের জোর।
আবাগী মরল ওরে
বন্দ কইরা দোর।"

আমার একটা প্রিয় কবিতা রবিঠাকুরের লেখা। যেখানে তিনি শরৎবাবুকে অনুরোধ করেছিলেন একটা সাধারণ মেয়ের গল্প লেখার জন্যে। জয়গুন কি সেই সাধারণ মেয়ে নাকি সংগ্রামী কোন নারী? গোর্কি এর মায়ের ছোঁয়া এতে? যে জানে কিভাবে সংগ্রাম করতে হয়!! জয়গুন কে রোল মডেল বানাতে কোনও অসুবিধা নেই।
"মেয়ে বলে মায়মুনকে এতদিন সে অনাদর করেই আসছে। কিন্তু অার না। হাসু কোলের আর মায়মুন পিঠের- তা তো নয়! দু'জনকেই সে পেটে ধরেছে।...."মায়মুনের জন্যে আর কোন দিন জয়গুন এমন করে ভাবেনি। আজ হাসু ও মায়মুন তার চোখে সমান হয়ে গেছে।"
কাসু যখন অসুস্থ জয়গুন ছুটে আসে তার পূর্বের স্বামীর ঘরে ফেলে আসা ছোট এই ছেলেটির টানে।.... 
"তোমরা ডাকতর দেহাইছিলা?
- ডাকতর কি করব? কত ফকির হট্ খাইয়া গেল!
অন্ধকারের মধ্যে জয়গুন আলো খুঁজে বেড়ায়। নিরাশার মধ্যেও আশা চেপে ধরে বুকে। ঝড়-ঝঞঝার মধ্যেও সে হাল ছেড়ে দেয় না।"

লেখক এক জায়গায় খুব চমৎকার কথা বলেছেন। বাস্তবতার আঙিনায় এ অনেক সত্যকথন।
"নিয়মের দুনিয়ায় অনেক অনিয়ম আছে। 'যেমন কর্ম তেমন ফল' তাই সব সময়ে পাওয়া যায় না। মাথার ঘাম পায়ে-ফেলা সারাদিনের কর্মফল বড় সামান্য। পরোপকার প্রায়ই বিফলে যায়। সে কর্মে যদিও ফল ফলে, তা তিতো, বিষাক্ত। এটা অনিয়ম বৈকি।"
সম্পর্কের টান-পোড়ন ছিল জয়গুন আর করিম বকশ এর। কাসুর জন্যে জয়গুনের হাহাকার আর কাসুর মায়ের কাছে যাবার আকুতি। আছে হাসুর অবিরত খাটুনি, মায়মুনের নিষ্পাপ শৈশব, রুগ্ন সমাজের পৈশাচিকতা আরও কত কি! শুধু বলব, আমার মতো যারা এতদিন বঞ্চিত ছিলেন... বইটাকে এখনই হাতে নিয়ে নিন।

লেখক শেষ করেছেন "সূর্য-দীঘল বাড়ী" এর ভুত ক্ষেপানো মধ্য দিয়ে। আর জয়গুনদের খোদার বিশাল দুনিয়ায় মাথা গুঁজবার একটু ঠাঁইয়ের খোঁজে।
"চলতে চলতে আবার জয়গুন পেছনে ফিরে তাকায়। সূর্য-দীঘল বাড়ী! মানুষ বাস করতে পারে না এ বাড়িতে। দু'খানা ঝুপড়ি। রোদ বৃষ্টি ও অন্ধকারে মাথা গুঁজবার নীড়। দিনের শেষে কাজের শেষে মানুষ পশু-পক্ষী এই নীড়ে ফিরবার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠে। ঐ উঁচু তালগাছ অনেক কালের অনেক ঘটনার নীরব স্বাক্ষী এটা।
তারা এগিয়ে চলে।
বহুদূর হেঁটে শ্রান্ত পা-গুলোকে বিশ্রাম দেয়ার জন্যে তারা গাছতলায় বসে। উঁচু তালগাছটা এত দূর থেকেও যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
আবার তারা এগিয়ে চলে.........।"




বাংলা একাডেমী পুরস্কার : ১৯৬২-৬৩
সুন্দরবন সাহিত্য পদক : ১৯৮১
একুশে পদক : ১৯৯৭
স্বাধীনতা পদক মরনোত্তর : ২০০৪
এ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র "সূর্য-দীঘল বাড়ী" ছয়টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।
* ১৯৮০ সালে পশ্চিম জার্মানীতে অনুষ্ঠিত ২৯তম ম্যানহেইম চলচ্চিত্র উৎসবে "ডুকার্ট" (স্বর্ণপদক)।
* ম্যানহেইম চলচ্চিত্র উৎসবে 'মানবিক আবেদনের' জন্যে আন্তর্জাতিক ইভানজ্যালিক্যাল (প্রোটেস্ট্যান্ট) সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক ক্যাথলিক সংস্থার দুটি বিশেষ পুরস্কার।
* পুর্তগালে অনুষ্ঠিত ১৯৮০ সালের 'নবম ফিগুয়েরা দ্য ফজ' আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উ্ৎসবে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ-এর 'প্রিকস ডন কুইকজোট' পুরস্কার।
* ২২তম ১৯৮০ কার্লোভিভেরী (চেকোশ্লোভাকিয়া) চলচ্চিত্র উৎসবে ডিপ্লোমা লাভ।
* নেদারল্যান্ডের ইন্টার চার্চ ফিল্ম সেন্টার এর বিশেষ পুরস্কার 'ইন্টার ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড' ১৯৮০।
* বাংলাদেশের ১৯৭৮ সালের শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে 'জাতীয় পুরস্কার' ও বিভিন্ন বিভাগে আরো 'আটটি' পুরস্কার।
* ১৯৭৯ সালের শ্রেষ্ঠ ছবি হিসাবে 'বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির' পুরস্কার ও বিভিন্ন আরো 'পাঁচটি' পুরস্কার।